মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথক দুই মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৬ কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ডে

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, অক্টোবর ১৯, ২০২৪

পৃথক দুই মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৬ কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ডে
পৃথক দুই রাষ্ট্রদ্রোহসহ সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ছয়জন কর্মকর্তার ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী এই রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন মুন্সিগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রাজন কুমার দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাহাত, নেত্রকোনার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মনির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর বেলাল হোসেন। এদের মধ্যে বেলাল হোসেন এক মামলার আসামি। অপর পাঁচজন আরেক মামলার আসামি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার ইন্সপেক্টর আশিকুর রহমান দেওয়ান প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার খিলক্ষেত থানায় ১০ কর্মকর্তাকে আসামি করে পৃথক দু’টি মামলা করেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড খিলক্ষেত থানার পরিচালক প্রশাসন (আইন শাখার) আরশাদ হোসেন।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন। গত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের মদদে বিদ্যুৎ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
মামলার আসামিরা হলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মুন্সিগঞ্জের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রাজন কুমার দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার উপ-মহাব্যবস্থাপক দীপক কুমার সিংহ ও জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাকির হোসেন, নেত্রকোনার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মনির হোসেন, বরিশালের মহাব্যবস্থাপক মোঃ হুমায়ুন কবির, নোয়াখালী সমিতির ওয়্যারিং পরিদর্শক আবু সালাম জাবেদ, মাগুরার উপমহাব্যবস্থাপক মোঃ রাহাত, ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল হাকিম ও ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর  সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ সালাহ উদ্দিন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তা/কর্মচারী একত্রিত হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচয়ে পরস্পর যোগসাজশে জরুরি সেবা বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে জড়িত হয়ে এবং বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের মদদে নানান অযৌক্তিক দাবি দাওয়ায় ষড়যন্ত্র করে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম কাজে লিপ্ত আছে। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে চরমভাবে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করার শামিল। তাদের এ সকল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মানহানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা তথা জনমনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সরকারকে চরমভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা। যা দেশদ্রোহীতার শামিল।


গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই দফা দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমিতির কর্মচারীরা। এতে জেলায় জেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিলেন গ্রামের মানুষ। সারা দেশেও বিদ্যুৎ বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়।


আরইবির অধীন কাজ করে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের ৫৫ শতাংশ আরইবির অধীন। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে মুক্তিকামী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যানারে এ আন্দোলন হচ্ছে।


আন্দোলনকারীদের পক্ষে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, ২০ কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ, চাকুরি অবসায়নের আদেশ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা। না হলে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবেন তাঁরা।
0 Comments